
মাহাবুবুর রহমান :
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে এখন প্রায় ৪ লাখ পর্যটক। অনেকে ফিরে গেলেও আবার নতুন পর্যটক আসছে। কয়েক দিনের সরকারি ছুটি আর বর্তমান পর্যটন মৌসুমকে ঘিরে এখন দেশি-বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মুখরিত কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পট। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, হোটেল ব্যবসায়িদের অতিথেয়তা আবার সাধারণ মানুষের ভাল আচরনে কক্সবাজার নিয়ে খুবই খুশি মনে বাড়ী ফিরছে পর্যটকরা। এই পরিবেশ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়ে অনেকে বলেন আগের চেয়ে কক্সবাজারের সার্বিক পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। সেটা ধরে রাখতে পারলে পর্যটনের বিকাশ হবে।
গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার সময় কক্সবাজার সৈকতে গোসল করা শেষে ফিরোজপুর থেকে আসা পর্যটক নাছির উদ্দিন শাহ বলেন, আমরা কয়েকটি ব্যবসায়ির পরিবার ছুটি কাটাতে কক্সবাজার এসেছি। এখানে এসে সাগরে গোসল করার মজাই আলাদা। ছেলে-মেয়েরা খুবই খুশি। এবার সৈকত একটু পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন মনে হচ্ছে। চারিদিকে ঘুরেও বেশ ভাল লাগছে।
পঞ্জগড় সরকারি কলেজের শিক্ষক আবদুল ওয়াহাব মিয়া ৩ দিন আগে এসেছেন পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে কক্সবাজারে। ঘুরে বেড়িয়েছেন রামু ইনানী সেন্টমার্টিন পর্যন্ত। তিনি বলেন, প্রতি বছর আমরা একবার ঘুরতে বের হই। ৭/৮ বছর আগে সর্বশেষ কক্সবাজার এসেছিলাম। এবার এসে দেখি কক্সবাজারের সার্বিকভাবে অনেক উন্নতি হয়েছে। এত মানুষ এক সাথে। তবুও কোথাও কোন বড় ধরণের সমস্যা চোখে পড়েনি। আর হোটেলগুলো পর্যটকদের সাথে ভাল ব্যবহার করছে। যাতায়াত করতেও ভাল নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করেছে। এক কথায় চারদিকে বেশ পর্যটন সমৃদ্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে।
কুমিল্লার শিল্প উদ্যেক্তা মায়মুনা আকতার রুবি বলেন, এবার কক্সবাজার এসে খুবই ভাল লেগেছে। হোটেল গুলোতে রুমের সংকট থাকলেও তারা মৌসুম হিসাবে তেমন বেশি দাম রাখছে না। দাম নিয়ে আমাদের তেমন আপত্তি নেই। এছাড়া তাদের আচার আচরনও খুবই ভাল লেগেছে। আর আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ঠ, যেখানেই যাচ্ছি নিরাপত্তা ব্যবস্থা চোখে পড়ছে, আর সেন্টমার্টিনে গিয়ে খুবই ভাল লেগেছে। সল্প খরচে বেশ ভাল ভাবেই উপভোগ করা গেছে সব কিছু। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এখানে উচ্চ বিত্ত নি¤œ বিত্ত সবার জন্য ব্যবস্থা আছে। কেউ মাত্র ৪০ টাকা দিয়ে ভাত খেতে চাইলে তাও খেতে পারছে।
ঢাকা দক্ষিন বাড্ডা এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ি সিরাজুল আলম বলেন, আমরা ২ পরিবার ৪ দিনের জন্য কক্সবাজার এসেছি। আমরা এক কথায় কক্সবাজার নিয়ে খুবই সন্তুষ্ঠ। ঢাকা থেকে যখন হোটেল বুকিং দিয়েছিলাম তখন মনে হয়েছে আমাদের কাছ থেকে দাম বেশি রাখা হচ্ছে কিন্তু এখানে এসে বুঝতে পারলাম সেটা ভুল ধারনা। যেখানে হাটার জায়গা নেই, সেখানে দাম একটু হবেই। সে হিসাবে তারা আমাদের সেবাটাও ভাল দিয়েছে। সকালে নাস্তা সহ হোটেলের সেবার মান খুবই ভাল। বিশেষ করে স্থানীয় সাধারণ মানুষের আচার আচারনও বেশ পর্যটন বান্ধব। রিক্সা, বা অটো গাড়ী নিয়ে বেশ সাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়ালেও টাকা তেমন বেশি নেয়নি। তবে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ভাল না থাকায় গাড়ি নিয়ে খুব ভোগান্তিতে আছি।
হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারে ছোট বড় মিলিয়ে ৪২০ টি হোটেল আছে। যেখানে ৫ লাখের বেশি পর্যটক থাকতে পারে। বর্তমানে কক্সবাজারে প্রায় ৪ লাখ পর্যটক অবস্থান করছে। বিশেষ করে নভেম্বরের পর থেকে চাপ বেড়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, শুধু ৪ লাখ পর্যটক আছে তা নয়, অসংখ্য ভিআইপি আছে। তবুও পর্যটন সংশ্লিষ্ঠ সব পয়েন্টে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। বড় চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা চেষ্টা করছি।
জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, সর্বক্ষেত্রে পর্যটনের আবহ থাকলেই পর্যটনের পথ সুগম হয়। সেটা তৈরি করা আমাদেরর সকলের দায়িত্ব। আমরা চাই কক্সবাজারে আরো বেশি পর্যটক আসুক। এবং এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করুক। সুত্র: ্দৈনিক কক্সবাজার
পাঠকের মতামত